অনেক ব্যক্তি করদাতাদের মধ্যে এই ধারণাটি আছে যে, আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেই নূন্যতম আয়কর প্রদান করতে হবে। আবার অনেকেরেই ন্যূনতম আয়করের উপর আয়কর রেয়াত এবং উৎসে কর কর্তন প্রযোজ্য হবে কিনা তা নিয়ে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাই এই ব্লগটিতে উদাহরণসহ এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
নূন্যতম আয়কর নির্ধারণ হয় ব্যক্তির করযোগ্য আয় এবং তার বসবাসের এলাকার উপর নির্ভর করে।
করযোগ্য আয়:
১. পুরুষের করদাতাদের ক্ষেত্রে বাৎসরিক করযোগ্য আয় যদি ৩ লক্ষ্য টাকার অধিক কিন্তু ৪ লক্ষ্য টাকা বা তার কম হয় তাহলে নূন্যতম আয়কর প্রযোজ্য হবে।
২. মহিলা করদাতাদের ক্ষেত্রে বাৎসরিক করযোগ্য আয় যদি ৩.৫০ লক্ষ্য টাকার অধিক কিন্তু ৪ লক্ষ্য টাকা বা তার কম হয় তাহলে নূন্যতম আয়কর প্রযোজ্য হবে।
বসবাসের এলাকা:
১. ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে বসবাসের এলাকা হলে নূন্যতম আয়কর হবে ৫ হাজার টাকা।
২. অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের অধীনে বসবাসের এলাকা হলে নূন্যতম আয়কর হবে ৪ হাজার টাকা।
৩. সিটি কর্পোরেশন বহির্ভূত স্থানে বসবাসের এলাকা হলে নূন্যতম আয়কর হবে ৩ হাজার টাকা।
উদাহরণ:
আসুন দুটি উদাহরণের সাহায্যে বুঝে নেই নূন্যতম আয়কর কিভাবে গণনা করতে হয়:
ধরে নেই, জনাব করিম ঢাকা বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কোনো একটি এলাকায় বসবাস করেন। তার বাৎসরিক করযোগ্য আয় ৩,৭০,০০০ টাকা। তাহলে গাণিতিক ভাবে তার প্রদেয় আয়কর হবে ((৩,৭০,০০০- ৩,০০,০০০) * ৫%) = ৩,৫০০ টাকা। কিন্তু আয়কর আইন অনুযায়ি, তাকে অবশ্যই ৫,০০০ টাকা আয়কর প্রদান করতে হবে। তিনি যদি ৩,৫০০ টাকা আয়কর বাবদ প্রদান করেন তাহলে সেটি ভুল হবে এবং এই কারণে তার আয়কর রিটার্নটি অডিটের আওতায় চলে আসতে পারে।
আবার ধরে নেই, জনাব রাকিব ঢাকা বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কোনো একটি এলাকায় বসবাস করেন। তার বাৎসরিক করযোগ্য আয় ৩,৯০,০০০ টাকা। তাহলে গাণিতিক ভাবে তার প্রদেয় আয়কর হবে ((৩,৯০,০০০- ৩,০০,০০০) * ৫%) = ৪,৫০০ টাকা। আয়কর আইন অনুযায়ি তাকে অবশ্যই ৪,৫০০ টাকা আয়কর প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে তার জন্যে ৪,০০০ টাকা নূন্যতম আয়কর প্রযোজ্য হবে না।
এক কথায়:
১. ব্যক্তি করদাতার নীট প্রদেয় আয়কর যদি নূন্যতম আয়করের চেয়ে কম হয় তাহলে তাকে নূন্যতম আয়কর প্রদান করতে হবে।
২. ব্যক্তি করদাতার নীট প্রদেয় আয়কর যদি নূন্যতম আয়করের চেয়ে বেশি হয় তাহলে তাকে নীট প্রদেয় আয়কর প্রদান করতে হবে।
নূন্যতম আয়কর এবং আয়কর রেয়াত:
মনে রাখতে হবে যে, আয়কর আইন অনুযায়ী নূন্যতম আয়করের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার আয়কর রেয়াত প্রযোজ্য নয়। তবে কোনো ব্যক্তি করদাতার প্রদেয় আয়করের পরিমান যদি নূন্যতম আয়করের চেয়ে বেশি হয় তাহলে আয়কর রেয়াত প্রযোজ্য হবে। তবে আয়কর রেয়াতের মাধ্যমে প্রযোজ্য নূন্যতম আয়করের পরিমানের হ্রাস হবে না। যেমনঃ কোনো ব্যক্তি করদাতা যিনি ঢাকা বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কোনো একটি এলাকায় বসবাস করেন এবং তার প্রদেয় আয়কর যদি ৫,১০০ টাকা হয় ও আয় বর্ষে ডিপিএসে বিনিয়োগ বাবদ ২,০০০ টাকা আয়কর রেয়াত পান, সেক্ষেত্রে আয়কর রেয়াত প্রযোজ্য হবে। আয়কর রেয়াত সমন্বয়ের পরে উক্ত ব্যক্তি করদাতার প্রদেয় আয়কর হবে = (৫,১০০ – ১০০) = ৫,০০০ টাকা। অর্থাৎ, নূন্যতম আয়কর তাকে পরিশোধ করতেই হবে এবং আয়কর রেয়াত নূন্যতম আয়করের হ্রাস করে নি।
নূন্যতম আয়কর এবং উৎসে কর কর্তন:
ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে নূন্যতম আয়কর বা প্রদেয় আয়কর যেটি প্রযোজ্য হোক না কেন উৎসে কর কর্তন সর্বদা সমন্বয় করতে হবে। যেমনঃ কোনো ব্যক্তি করদাতা যিনি ঢাকা বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কোনো একটি এলাকায় বসবাস করেন তার নূন্যতম আয়করের পরিমান যদি ৫,০০০ টাকা হয় এবং তার বেতন থেকে যদি ২,০০০ টাকা উৎসে কর কর্তন করা হয় তবে সেই ব্যক্তির জন্যে নীট প্রদেয় আয়কর হবে = (৫,০০০ – ২,০০০) = ৩,০০০ টাকা। এক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের ফলে নূন্যতম আয়করের পরিমান হ্রাস পাবে।
কখন নূন্যতম আয়কর একজন ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তার গণনা করা বেশ জটিল। এ ধরনের ভুল হলে আয়কর রিটার্নটি অডিটের আওতায় চলে যেতে পারে। তাই এসব ঝামেলা এড়াতে ব্যক্তি করদাতা তার আয়কর রিটার্ন বিডি ট্যাক্সের স্বয়ংক্রিয় সফটওয়ারের মাধ্যমে খুবেই সহজেই প্রস্তুত করে নিতে পারেন। এছাড়াও ব্যক্তি করদাতা আয়কর রিটার্নটি বিডি ট্যাক্সের অভিজ্ঞ ট্যাক্স কনসালটেন্টদের দ্বারা মূল্যায়ন বা রিভিউ করিয়েও নিতে পারেন। এতে একদিকে যেমন আয়কর রিটার্নটি স্বচ্ছ এবং নির্ভুল হবে অন্যদিকে আয়কর রিটার্নটি অডিটের আওতায় আসার সম্ভবনা কমে আসবে।
লেখক:
সাজ্জাদ হোসেন শরীফ, এমবিএ, পিজিডিএফআইএ, সিএফএস
Leave A Comment