সরকারের নিজস্ব কোন আয় নেই। জনগণের কাছ থেকে সারা বছর ধরে আয়কর নিয়ে দেশের প্রয়োজনে ব্যয় করে থাকে। আমরা সাধারনত বছর শেষে রিটার্ন জমা দিয়ে থাকি। তখন আমাদের আয় হিসেব করে সরকারকে আয়কর দিয়ে থাকি।
কিন্তু সরকারকে সারা বছর ধরে বিভিন্ন খরচ করতে হয়। যেমন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ঋণের কিস্তি এবং সুদসহ বিভিন্ন খরচ। এখন সরকার যদি বছর কখন শেষ হবে এবং তারপর জনগণের কাছ থেকে আয়কর বাবদ টাকা পাবে সেই আশাতে বসে থাকে তাহলে সরকারের সকল কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।
তাই সরকার যাতে সারা বছর ধরে দেশ পরিচালনা করতে পারে সে জন্য বিভিন্ন উপায়ে জনগণের কাছ থেকে কর নিয়ে থাকে। এর মধ্যে উৎসে কর হলো একটি।
এই উৎসে কর কর্তন কিভাবে করতে হবে, কতো হারে কর্তন করতে হবে এবং কতো সময়ের মধ্যে সেই কর্তনকৃত কর সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে তা আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-তে বলা আছে।
আমরা নিচে একে একে সেই বিষয়গুলোই আজ জানবো। চলুন তাহলে শুরু করি।
উৎসে কর কর্তন কি?
উৎসে কর কর্তন নামেই বুঝতে পারছেন যখন কোন আয় হবে যেখানে হবে সেখানেই টাকা পরিশোধের সময় নির্দিষ্ট হারে কর কেটে তা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়।
যেহেতু আয়ের উৎস যেখানে এবং আয় পরিশোধের সময় এই কর কেটে রাখা হয় তাই এই কর উৎসে কর হিসেবে পরিচিত।
ধরুন, আপনি একজন চাকুরীজীবি । মাস শেষে আপনি কোম্পানির কাছ থেকে বেতন পান। সেখানে কিছু টাকা কেটে রেখে যেমন ভবিষৎ তহবিল বা স্ট্যাম্প খরচ হিসেবে কিছু টাকা কেটে রেখে আপনার ব্যাংক হিসেবে টাকা ট্রান্সফার করা হয়।
এর সাথে হয়তো লক্ষ্য করেছেন। আপনার টাকা আরো কিছু কম যাচ্ছে। অ্যাকাউন্টস বিভাগে যোগাযোগ করার পর তারা আপনাকে বলেছেন আয়কর হিসেবে সেই টাকাটা কাটা হচ্ছে। সেই কর্তনকৃত টাকাই হলো উৎসে কর।
আবার আপনি ব্যবসা করেন। দেখা গেলো আপনি যখন কোন পণ্য সাপ্লাই করছেন তখন সেখান থেকে একটা নির্দিষ্ট হারে কর কর্তন করে বাকি টাকার চেক আপনাকে ধরিয়ে দিয়েছে। এসবই উৎসে কর হিসেবে পরিচিত।
কোন কোন খাতে কর কর্তন করতে হয়?
কোন কোন খাতে উৎসে কর কর্তন করতে হবে তা আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-তে বিশদভাবে বলা হয়েছে। কোন খাতে কতো টাকার উপর কি হারে কর কর্তন করতে হবে তা ধারাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
আপনি যদি ঐ খাত থেকে টাকা উপার্জন করে থাকেন তাহলে সেই টাকা পাওয়ার সময় যিনি আপনাকে তাকা পরিশোধ করবেন তাকে সেই নির্দিষ্ট হারে কর কেটে রেখে বাকিটা আপনার ব্যাংক হিসেবে পাটিয়ে দিবে। অথবা অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক এর মাধ্যমে পরিশোধ করবেন।
আপনার আয় থেকে ঠিক হারে কর কেটেছে কি না? বেশি কেটেছে কিনা? এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই শুনা যায়। এ ক্ষেত্রে আপনি যে খাতে আয় করেছেন সেই খাতে উৎসে করের হার কতো তা জেনে নিতে পারেন। তাহলে এই ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন না।
প্রতি বছর কোন খাতে উৎসে কর কতো তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রকাশ করে থাকে। এটা বিশাল একটি তালিকা। দশ থেকে পনের পাতার একটি তালিকা। তবে আপনারা চাইলে উৎসে কর এই লিংকে গিয়ে সম্পূর্ণ তালিকা পেতে পারেন। আশা করি কাজে দিবে।
উৎসে কর্তনকৃত কর কিভাবে পরিশোধ করবেন ?
কর্তনকৃত কর আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কোন শাখায় জমা দিতে পারবেন। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা থাকবে না সেখানে সোনালি ব্যাংক লিমিটেড এর যেকোন শাখায় জমা দিতে পারবেন। পে-অর্ডার করে চালানের মাধ্যমে আপনার কর্তনকৃত কর জমা দিতে হবে।
প্রতিটি চালান তিন কপি করে করতে হবে। কত টাকা জমা দিচ্ছেন এবং প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা এবং বিবরণসহ চালানে উল্লেখ করতে হবে।
চালান জমা দেওয়ার পর ব্যাংকের কর্মকর্তা নিজ সাক্ষর করে সিল দিয়ে আপনাকে ফেরত দিবে। চালানে অবশ্যই কোড নাম্বার উল্লেখ করতে হবে।
উৎসে কর্তনকৃত কর জমা দেওয়ার সময়সীমা
আপনি এতোক্ষণ ধরে জানলেন কোন খাতে কর কর্তন করতে হবে এবং কিভাবে সেই কর সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। কিন্তু এই কর্তনকৃত কর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। তা না হলে মাশুল গুনতে হয়। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কর্তনকৃত কর জমা দেয়া উত্তম। নিচে কখন উৎসে কর কর্তন করলে কতো সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে তা টেবিলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো।
কর্তনের সময় | সময়সীমা |
জুলাই থেকে মে পর্যন্ত | যে মাসে উৎসে কর কর্তন করা হবে তার পরের দুই সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে হবে। |
জুন মাসের ০১ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত | যেদিন উৎসে কর কর্তন করা হবে তার সাত দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে। |
জুন মাসের অন্য যে কোন দিন | যেদিন উৎসে কর কর্তন করা হবে তার পরের দিন জমা দিতে হবে। |
উল্লেখ্য, যদি আপনি জুন মাসের শেষ দুই কর্ম দিবসে উৎসে কর কর্তন করেন তাহলে যেদিন কর কর্তন করবেন আপনাকে সেদিনই সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।
উপরের টেবিলের প্রথম ক্ষেত্রে, আপনি জুলাই মাসে সারা মাস ধরে বিভিন্ন কর্ম দিবসে বিভিন্ন খাতে উৎসে কর কর্তন করেছেন। সেই কর্তনকৃত কর পরের মাসে অর্থাৎ আগস্ট মাসের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে সরকারি কোষাগারে চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
আমাদের সবারই লক্ষ্য থাকা উচিত সময়ের কর সময়ে পরিশোধ করে দেশের উন্নয়নে সাহায্য করা। এতে করে একদিকে যেমন দেশের উন্নয়নে কাজে দিবে অন্যদিকে বিলম্ব জরিমানা হতেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
Jasim Uddin Rasel
আপনি আমাদের সিস্টেম এ রেজিস্ট্রেশন করুন আমাদের সিস্টেম এ সব দেয়া আছে, আপনার উৎসে পরিশোধিত কর অবসসই আপনার রিটার্ন এ দেখতে হবে। আমাদের সিস্টেম এ করলে আপনার কোনো হিসেব করা লাগবে না। আমাদের সিস্টেমে আপনার একাউন্ট করে আয়করের জন্য যে সব তথ্য চাওয়া হয়েছে তা পূরণ করলেই সিস্টেম আপনার আয়কর অটো হিসাব করে দেবে।
আপনার একাঊণ্ট খুলতে এই লিংকে যান- https://bdtax.com.bd/index.php/user/registration/individual
জনাব,
আমি ১ জন ছাত্র।
ঋন করে একটা দান কবলা করতেছি। আমার মত এতিম থেকে ৩% উৎস কর কি প্রযোজ্য??
যদি এটি উৎস কর এ অন্তর্ভুক্ত হয় তবে অবশ্যই প্রযোজ্য।
আপনি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের ইমেইল করুন support@bdtax.com.bd