আপনি যদি কর দিবসের মধ্যে অর্থাৎ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনি ৫০% কর রেয়াত কম পাবেন। এবং এজন্য আপনার করের অংক অনেক বেড়ে যাবে।
আপনি যদি এখনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে থাকেন এবং ভাবছেন সময় নিয়ে পড়ে রিটার্ন দাখিল করে দিবেন তাহলে আপনি আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। তা না হলে আপনি বড় অংকের কর রেয়াত সুবিধা হারাবেন।
মূলত দুইটি কারনে আপনি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। নিচে চলুন এই দুইটা গুরুত্বপূর্ণ কারন জেনে নেই।
৫০% কর রেয়াত সুবিধ থেকে বঞ্চিত হবেন
এই বছর অর্থ আইন ২০২২-এ নতুন নিয়মটি সংযোজন করা হয়েছে। একজন করদাতা সাধারণত বিনিয়োগ ভাতার উপর ১৫% হিসেবে কর রেয়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন। একজন ব্যক্তি করদাতার জন্য এই কর রেয়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারন, আইনগতভাবে করদায় কমানোর উপায় হলো কর রেয়াত। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি করদাতা যদি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন তাহলে তিনি তার করযোগ্য আয়ের উপর যে করদায় নির্ণয় করেছেন তা থেকে ৭.৫% হিসেবে কর রেয়াত বাদ দিতে পারবেন। অর্থাৎ, কর রেয়াত ১৫% এর স্থলে হয়ে যাবে ৭.৫%।
ধরুন, আপনার বিনিয়োগ ভাতা ২০০,০০০ টাকা। তাহলে আপনি যেহেতু ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাই আপনি এই ২০০,০০০ টাকার উপর কর রেয়াত পাবেন ৭.৫% হিসেবে ১৫,০০০ টাকা। কিন্তু আপনি যদি কর দিবসের আগে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতেন তাহলে ১৫% হিসেবেই ৩০,০০০ টাকা কর রেয়াত পেতেন। ভেবে দেখুন, শুধুমাত্র সময়মত রিটার্ন দাখিল না করার জন্য আপনি ১৫,০০০ টাকা কর রেয়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এখন আপনি ভাবতে পারেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করতে পারলে বর্ধিত সময়ের জন্য আবেদন করবো। আপনি উপকর কমিশনারের কাছ থেকে বাড়তি সময়ের অনুমোদন পেলেও কর রেয়াত ১৫% পাবেন না। আপনার কর রেয়াত ৭.৫%-ই হবে। তাছাড়া এই বর্ধিত সময়ের জন্যও কিন্তু আপনাকে বিলম্ব সুদ দিতে হবে।
মাসিক ২% বিলম্ব সুদ দিতে হবে
সম্পূর্ণ কর রেয়াত সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আপনি যে সময় বৃদ্ধি করেছেন ঐ বর্ধিত সময়ের জন্য আপনাকে মাসিক ২% হিসেবে বিলম্ব সুদ দিতে হবে। এই বিলম্ব সুদ আপনার নীট করদায়ের উপর গণনা করতে হবে। আপনি যে করযোগ্য আয় গণনা করে তার উপর করদায় বের করেছেন তা থেকে প্রথমে কর রেয়াত এবং পরে উৎসে কর বা অগ্রিম কর যা দিয়েছেন। এরপর অবশিষ্ট টাকার উপর আপনাকে ২% মাসিক ভিত্তিতে বিলম্ব সুদ দিতে হবে।
ধরুন, আপনার মোট করদায় এসেছে ৫০,০০০ টাকা। আপনি যেহতু ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেননি তাই আপনি কর রেয়াত পেয়েছেন ১৫,০০০ টাকা। আর উৎসে কর বা অগ্রিম কর দিয়েছেন ১৫,০০০ টাকা। কর রেয়াত এবং উৎসে কর বা অগ্রিম কর বাদ দেওয়ার পর বাকি থাকে ২০,০০০ টাকা। এই টাকার উপর আপনাকে ২% হিসেবে বিলম্ব সুদ দিতে হবে।
আপনি যদি দুই মাসের জন্য সময় চেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে বিলম্ব সুদ দিতে হবে ৮০০ টাকা (২০,০০০X২%X২মাস)। এবং এই টাকা ২০,০০০ টাকার সাথে যোগ করে মোট ২০,৮০০ টাকা রিটার্নের সাথে জমা দিতে হবে।
কিন্তু আপনি যদি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতেন তাহলে আপনি ১৫,০০০ টাকার স্থলে ৩০,০০০ টাকা কর রেয়াত পেতেন এবং ৮০০ টাকা বিলম্ব সুদ দিতে হতো না। তখন আপনি রিটার্নের সাথে ৫,০০০ টাকা জমা দিতে হতো। তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনি বড় একটি অংকের সুবিধা হারাচ্ছেন।
আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আপনাকে সময় বৃদ্ধির আবেদন ফরম পূরণ করে তা উপকর কমিশানারের অফিসে গিয়ে অনুমোদন নিতে হবে। এজন্য আপনার সময়ও নষ্ট হচ্ছে। আর এজন্যই যেহতু হাতে এখনো সময় আছে তাই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করার চেষ্ঠা করুন।
জসীম উদ্দিন রাসেল
Leave A Comment