ব্যক্তি করদাতার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ সময় ৩০ শে নভেম্বর। তাই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা প্রদান করা সুনাগরিক হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু কোনো ব্যক্তি করদাতা যদি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার আয়কর রিটার্নটি জমা না দিতে পারেন তাহলে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে পারবেন। তবে চলুন জেনে নেই, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দিষ্ট ফরমে সময় বাড়ানোর আবেদন কিভাবে করতে হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন (Application of time extension for return submission) ফরমটি দেয়া আছে। এই ফরমটিতে মাত্র দুটি পৃষ্ঠা আছে এবং উভয় পৃষ্ঠাতেই একই তথ্য প্রদান করতে হয়। কারণ একটি হলো করদাতার কপি এবং অন্যটি হলো অফিস কপি যা ফরমের উপরে লিখা আছে। ব্যক্তি করদাতা এই ফরমটিতে তার নাম, ঠিকানা, কর অঞ্চল, কর সার্কেল, স্বাক্ষর এবং আবেদনের তারিখ প্রদানের পাশাপাশি সময় বাড়ানোর যৌক্তিক কারণটি প্রদান করবেন।
ব্যক্তি করদাতাকে সময় বাড়ানোর আবেদন পত্র পূরণ করে নিজ কর সার্কেলে জমা দিতে হবে। অতঃপর উক্ত কর সার্কেলের উপ কর কমিশনার (ডিসিটি) আবেদনপত্রটি যাচাই–বাছাই করবেন। যদি উপ কর কমিশনার (ডিসিটি) সময় বৃদ্ধির কারণটি যৌক্তিক মনে করেন তাহলে দুই মাস পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন। ব্যক্তি করদাতা যদি এই বর্ধিত সময়ের মধ্যে তার আয়কর রিটার্নটি জমা প্রদানে ব্যর্থ হন তাহলে পুনরায় সময়ের বাড়ানোর আবেদন করতে পারবেন। পুনরায় আবেদন যাচাই–বাছাই করে যদি উপ কর কমিশনার (ডিসিটি) পুনরায় সময় বৃদ্ধির কারণটি যৌক্তিক মনে করেন তাহলে রিটার্ন দাখিলের জন্যে ব্যক্তি করদাতা আরো দুই মাস সময় পাবেন।
উল্লেখ্য যে, ব্যক্তি করদাতা ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও তার আয়করের উপর ২ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ ধার্য হবে। নিম্নে বিলম্ব সুদ ধার্য্যের একটি উদাহরণ দেয়া হলো
জনাব আবীরের আয়করের পরিমান ২,০০,০০০ টাকা। তার বেতন থেকে উৎসে কর দিয়েছেন ৭৫,০০০ টাকা। গাড়ির অগ্রিম কর দিয়েছেন ২৫,০০০ টাকা। তাহলে তার প্রদেয় করে পরিমান হলো = (২,০০,০০০ – ৭৫,০০০ – ২৫,০০০) = ১,০০,০০০ টাকা। যদি তিনি ১,০০,০০০ টাকা আয়কর ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে দিতে ব্যর্থ হন তবে বিলম্ব সুদ হবে (১,০০,০০০ * ২% * ২) = ৪,০০০ টাকা। সুতরাং জনাব আবীরের নীট প্রদেয় কর হবে = (১,০০,০০০ + ৪,০০০) = ১,০৪,০০০ টাকা। অর্থাৎ, জনাব আবীর তার আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ তাকে ১,০৪,০০০ টাকা আয়কর হিসেবে প্রদান করতে হবে।
কোনো ব্যক্তি করদাতা যদি ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হন এবং সময় বাড়ানোর আবেদনও না করেন তাহলে জরিমানার পাশাপাশি ৫০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত সরল সুদ আরোপ হতে পারে। এছাড়া বিলম্ব সুদও আরোপ হতে পারে।
তাই বিলম্ব সুদ বা জরিমানার মতো বিষয়গুলো এড়াতে ব্যক্তি করদাতার উচিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা। যে কোনো ব্যক্তি করদাতা তার আয়কর রিটার্ন বিডি ট্যাক্সের স্বয়ংক্রিয় সফটওয়ার ব্যবহার করে খুব সহজে এবং অতি অল্প খরচে প্রস্তুত করতে পারবেন। এছাড়া বিডি ট্যাক্সের আছে অভিজ্ঞ ট্যাক্স কনসালটেন্ট যাদের দ্বারা ব্যক্তি করদাতা তার আয়কর রিটার্নটি মূল্যায়ন বা রিভিউ করিয়ে নিতে পারবেন। এতে আয়কর রিটার্নে ভূল থাকার সম্ভবনা থাকবে না।
লেখক:
সাজ্জাদ হোসেন শরীফ, এমবিএ, পিজিডিএফআইএ, সিএফএস
Leave A Comment