প্রতি বছর ১লা জুলাই থেকে শুরু হয় নতুন কর বর্ষের আয়কর রিটার্ন জমা নেয়া। ১লা জুলাই থেকে ৩০ শে নভেম্বর পর্যন্ত একজন করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারে।
যারা নিয়মিত কর দেন বা খোঁজ-খবর রাখেন তারা জানেন বিগত কয়েক বছর ধরে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতি বছর আয়কর মেলা আয়োজন করে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এই সময়ে মেলায় আয়কর দেয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিভিন্ন ধরনের প্রচারনা চালিয়ে থাকে করদাতাদের আয়কর প্রদানে উৎসাহ দেয়ার জন্য। কয়েক বছর ধরে করদাতারাও স্বতস্ফূর্তভাবে মেলায় গিয়ে আয়কর দিয়ে আসছেন। আর আশার কথা হলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-ও তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সফল হচ্ছে।
তবে যারা মেলাতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন না তারা এর পরেও ৩০ নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
যারা বাংলাদেশে আছেন, তারা চাইলে এই সময়ের মধ্যে যে কোন দিন মেলায় অথবা মেলার পরে আয়কর সার্কেলে গিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। কিন্তু যারা কাজের জন্য দেশের বাইরে আছেন এবং কর দিবেন তারা কিভাবে তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন? তারা কিভাবে তাদের আয়কর পরিশোধ করবেন?
চিন্তার কিছু নেই। যারা দেশের বাইরে থাকেন এবং নিয়মিত আয়কর দিয়ে থাকেন বা এইবারই প্রথমবার আয়কর দিতে যাচ্ছেন তারাও খুবই সহজে তাদের আয়কর দিতে পারবেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাদের কথা চিন্তা করেই কিছু ব্যবস্থা রেখেছে।
দেশের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তি কোন আয়ের উপর আয়কর দিবেন?
কোন বাংলাদেশী যদি কাজের জন্য দেশের বাইরে থাকেন এবং তার যদি বাংলাদেশে করযোগ্য আয় থেকে থাকে তাহলে তাকে আয়কর দিতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো তিনি যে দেশের বাইরে থাকেন সেখানকার আয়ের জন্য কি আয়কর দিতে হবে?
এর উত্তর হলো সে দেশে উপার্জিত আয় যদি তিনি দেশে নিয়ে আসেন তাহলে আয়কর রিটার্ন-এ তাকে সেই আয় দেখাতে হবে। যদি তার দেশের বাইরে উপার্জিত আয় দেশে না নিয়ে আসেন তাহলে তা আয়কর রিটার্নে দেখাতে হবে না এবং তার জন্য তাকে কোন আয়কর দিতে হবে না।
দেশের বাইরে উপার্জিত আয় তিনি যদি দেশের প্রচলিত আইন মেনে নিয়ে আসেন তাহলে তার উপর তাকে আয়কর দিতে হবে না। এখানে প্রচলিত আইন বলতে সাধারণত আমরা বুঝে থাকি ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে অর্থ নিয়ে আসা।
এখন তিনি যদি এই মাধ্যম ছাড়া অন্য কোন উপায়ে টাকা নিয়ে আসেন তাহলে তার উপর আয়কর দিতে হবে কিনা?
প্রথম কথা হলো আয়কর তো দিতে হবেই এর বাইরে তিনি অন্য যেভাবেই নিয়ে আসেন না কেন তা হয়তো হুন্ডির মধ্যে পরে যাবে। যেটা অবৈধ। এর জন্য আইনি জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে।
তাই বৈধ পথে বিদেশে অর্জিত টাকা নিয়ে আসাটাই ঝামেলামুক্ত এবং তা আয়কর রিটার্নে দেখিয়ে কর দেয়া থেকে মুক্তও থাকা যায়।
কিভাবে আয়কর প্রদান করবেন?
আপনি থাকেন দেশের বাইরে। কিন্তু আপনার কিছু আয় বাংলাদেশেও হচ্ছে যা করযোগ্য। তাই আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর দিতে হবে।
এখন কিভাবে আয়কর পরিশোধ করবেন?
প্রথম কথা হলো আপনার বাংলাদেশে যে যে খাতে আয় হচ্ছে তা নির্ণয় করে আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করুন। তার উপর আপনার করদায় কত তা নির্ণয় করুন।
যারা দেশের বাইরে থাকেন কিন্তু আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আসতে পারেন না তারা যে দেশেই থাকেন না কেন সে দেশে বাংলাদেশী দূতাবাস বা মিশনে তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
তাই আপনি আপনার রিটার্ন ভালো মতো পূরণ করে দরকারি কাগজপত্র সাথে নিয়ে আপনার কাছাকাছি বাংলাদেশী দূতাবাস বা মিশনে গিয়ে আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগে সব কাজই আগের থেকে অনেক সহজ হয়ে গেছে। আপনি চাইলে খুব সহজেই bdtax.com.bd –এই ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করে সফটওয়্যারে আপনার আয়ের তথ্য ইনপুট দিতে পারেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার মোট করযোগ্য আয় এবং করদায় বেরিয়ে আসবে। এতে করে আপনাকে জটিল হিসেব নিকেশ করতে হবে না। তা প্রিন্ট করে জমা দিলেই আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল হয়ে যাবে।
জসীম উদ্দিন রাসেল
Leave A Comment