কোভিড-১৯: ব্যক্তি করদাতার জন্য কর সুবিধা কি হতে পারে
প্রায় এক মাস ধরে মানুষ ঘরে অবস্থান করছেন। খুব দরকার ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। অফিস বন্ধ থাকাতে বাসা থেকে কিছু মেইল আদান-প্রদান ছাড়া তেমন কোন কাজই হচ্ছে না। এমন অবস্থায় চাকরী নিয়ে অনেকেই শংকায় আছেন।
করের সাথে আয়ের সম্পর্ক সরাসরি জড়িত। আয় না থাকলে কর আসেনা। কোভিড-১৯ এর কারনে মানুষের আয়ের উপর সরাসরি প্রভাব পড়েছে। প্রথম চীনে করোনাভাইরাস আক্রমণ করে। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সারা পৃথিবীর মানুষ এখন গৃহবন্দী। কবে এই অবস্থার শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।
চীন থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রায় সব দেশই ব্যবসায়ীসহ সাধারন মানুষের জন্য যেমন আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে তেমনি কর সুবিধাও দিচ্ছে।
বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু করদাতাদের জন্য এখনো কোন সুবিধা দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন মহল থেকে করদাতাদের জন্য সুবিধা দেওয়ার দাবী উঠছে। কিন্তু এখনো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কিছু বলছে না।
সামনে বাজেট। আশা করা হচ্ছে সেই বাজেটে হয়তো এই বিষয়ে কিছু থাকবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের প্রস্তাবনা মিডিয়াতে তুলে ধরেছে। সেগুলো কতোটুকু রাখা হবে তা জানার জন্য আমাদের আগামী জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
চীনে কোভিড-১৯ আক্রমণের পর তারা যেমন করদাতাদেরকে কর সুবিধা দিয়েছে তেমনি অন্যান্য দেশও দিয়েছে। সেই আলোকে বাংলাদেশে কি কর সুবিধা দেওয়া যেতে পারে তা আমরা আলোচনা করতে পারি?
চিকিৎসাকর্মীদের প্রণোদনা এবং কর সুবিধা
ইতোমধ্যেই চিকিৎসা কর্মীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য দেশে এই আর্থিক সুবিধা যেমন দেওয়া হয়েছে তেমনি তারা যে অর্থ পাবেন তা করমুক্তও রাখা হয়েছে। অর্থাৎ একজন চিকিৎসক সেবা দিয়ে সরকার বা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে যে আর্থিক সুবিধা পাবেন তার উপর তাকে কর দিতে হবেনা। এর ফলে তিনি দুইদিক থেকেই আর্থিকভাবে সুবিধা ভোগ করছেন।
এই মহামারির সময় এই সুবিধা ঘোষণা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারন, আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে জীবনের ঝুকি নিয়ে এগিয়ে আসেন চিকিৎসাকর্মীরা। তাই তাদের বিষয়টা সবার আগে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। যদিও জীবনের চেয়ে আর্থিক সুবিধা বড় না।
করমুক্ত আয়সীমা বাড়াতে হবে
গত কয়েক বছর ধরেই ব্যক্তি করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকার মধ্যে আটকে আছে। প্রতি বছরই এই সীমা বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা বা তার বেশি করার দাবি উঠে। যুক্তি হিসেব বলা হয়, প্রতি বছরই মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে। এবং দেশ উন্নত হচ্ছে। সেই হিসেবে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত। কিন্তু বিগত বাজেটগুলোতে প্রতিবারই তা প্রত্যাখান করা হয়েছে।
এবার কোভিড-১৯ প্রভাবের কারনে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর জোর দাবি উঠেছে। এমনিতেই মানুষের আয় নিয়মিত থাকবে কিনা তা নিয়ে শংকা রয়েছে। তার উপর যদি করের বোঝা আবার বাড়ে তাহলে সবার জন্যই সমস্যা হবে।
কর হার হ্রাস করতে হবে
বাংলাদেশে প্রথম কর হার শুরু হয় দশ শতাংশ থেকে। এই হার কমিয়ে ৫ শতাংশ বা সাড়ে সাত শতাংশ করার প্রস্তাব গত কয়েক বছর ধরেই উঠে আসছে। এর পেছনে যুক্তি হলো, করদাতা যখন দেখে তাকে শুরুতেই অনেক কর দিতে হচ্ছে তখন সে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। এতে করে কর ফাকির ঘটনা ঘটে।
তাই এই হার শুরুতে যদি কম থাকে তাহলে অনেক করদাতাই কর দিতে আগ্রহী হবেন। পাশের দেশ ভারতে পাচ শতাংশ হারে কর গণনা শুরু হয়। তাই আগামী বাজেটে সরকার এই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে।
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় অনুদান
গত একমাসে সাধারন মানুষ যারা দিন এনে দিন খায় তাদের আয় বন্ধ। করুন অবস্থায় তারা ছেলে-মেয়ে নিয়ে দিন পার করছেন। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও এই মহাবিপদে এগিয়ে আসতে হবে। অনেকেই যার যার সাধ্যমত অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।
যারা এমন নিজ উদ্যোগে মানুষের জন্য এগিয়ে এসেছেন তাদের জন্যও কর সুবিধা রাখা উচিত। অন্যান্য দেশেও এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
আয়কর আইনে উল্লেখিত খাতে আনুদান দিলে তা বিনিয়োগ ভাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় যার উপর একটি নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত পাওয়া যায়। কর রেয়াতের সুবিধা হলো তা একজন করদাতার করদায় অনেকাংশে হ্রাস করে।
আগামী বাজেটে বা তার আগেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোসহ আরো যা ভালো প্রস্তাব আছে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে।
এখনো বাজেট কার্যক্রম শুরু হতে এক মাসের উপর সময় বাকি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে যদি কর সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা আসে তাহলে করদাতাদের মধ্যে যেমন একটা স্বস্থি আসবে তেমনি অনেকই এই বিপদে অন্যের সাহাযে এগিয়ে আসতে অনুপ্রেরণা পাবেন।
জসীম উদ্দিন রাসেল
A perfect & necessary platform for tax payers and user’s.
Thank you very much for your comments. Please give your valuable opinion on our Facebook page: https://www.facebook.com/bdtaxonline/