দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে এবার ব্যক্তি করদাতাদের আশা ছিলো করমুক্ত সীমা ৩,৫০,০০০ টাকা থেকে কিছুটা হলেও বাড়বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করমুক্ত সীমা অপরিবর্তীত রয়ে গেছে। বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর কোন প্রস্তাব করা হয়নি। তবে কর ধাপ এবং কর হারে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
আগে একজন ব্যক্তি করদাতা তার করযোগ্য আয়ের উপর সর্বোচ্চ ২৫% আয়কর দিতেন। কিন্তু এবার বাজেটে তা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩০% করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এবং এর ফলে যাদের আয় একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করবে তাদেরকে এই সর্বোচ্চ হারে আয়কর দিতে হবে। তবে কয়েক বছর আগে ব্যক্তি করদাতারা সর্বোচ্চ ৩০% আয়কর দিতেন। এবার তা ফিরে এলো। তবে করধাপ এবং কর হারে আরো যে দুইটি পরিবর্তন এসেছে তার ফলে কিছু করদাতা বাড়তি কিছু সুবিধা পাবেন। তাদের আয়কর হ্রাস পাবে।
করধাপ এবং করহার পরিবর্তন:
করধাপ অনুযায়ী যে করহার ব্যবহার করে আয়কর গণনা করা হয় সেখানে মধ্যে দুইটি ধাপে ১,০০,০০০ টাকা করে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে করে সর্বমোট ২,০০,০০০ টাকার উপর আয়কর সুবিধা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ আয়করের পরিমাণ হ্রাস পাবে। নিচে থেকে প্রথমে গত বছর করযোগ্য আয়ের উপর করহার দেখে নিন।
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা – ০% |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা – ৫% |
পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকা – ১০% |
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা – ১৫% |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা – ২০% |
অবশিষ্ট করযোগ্য আয়ের উপর – ২৫% |
এবার প্রস্তাবিত কর ধাপ অনুযায়ী করহার দেখে নিন।
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা – ০% |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা – ৫% |
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা – ১০% |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা – ১৫% |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা – ২০% |
পরবর্তী ২০,০০,০০০ টাকা – ২৫% |
অবশিষ্ট করযোগ্য আয়ের উপর – ৩০% |
তাহলে উপরে লক্ষ্য করুন আগে যেখানে ৩,০০,০০০ টাকার উপর ১০% এবং ৪,০০,০০০ টাকার উপর ১৫% করে আয়কর দিতেন এখন তা ১,০০,০০০ টাকা করে বেড়ে গেছে। এবং এর ফলে যে-সব করদাতার করযোগ্য আয় ৪,৫০,০০০ টাকা অতিক্রম করবে এবং ১০% ও ১৫% করহারের মধ্যে পড়বেন তারা ২,০০,০০০ টাকার উপর কর কম দিবেন। হিসেব করে দেখা গেছে যে-সব করদাতা এই দুইটি করহারের মধ্যে পড়বেন তাদের মোট আয়কর ১৫,০০০ টাকা লাঘব হবে।
আর যাদের করযোগ্য আয় বছরে ৩৮,৫০,০০০ টাকা অতিক্রম করবে তারাই কেবল সর্বোচ্চ করহার ৩০% হিসেবে আয়কর দিবেন।
বিলম্ব ফি গণনায় পরিবর্তন
আরেকটি বড় পরিবর্তন হলো, বিলম্ব ফি-র পরিমাণ হ্রাস পাবে। গত বছর ৪% মাসিক ভিত্তিতে বিলম্ব ফি গণনা করতে হতো। এবং মোট আয়করের উপর এই ৪% প্রয়োগ করতে হতো । একজন করদাতা রিটার্ন দাখিল করার আগে যদি উৎসে বা অগ্রিম আয়কর দিতেন তা বিবেচনায় নেওয়া হতো না। এর ফলে করদাতাকে কর পরিশোধিত টাকার উপরও ৪% বিলম্ব ফি দিতে হতো। কিন্তু এবার বাজেটে তার পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগে যেখানে ৪% মাসিক ভিত্তিতে বিলম্ব ফি গণনা করতেন এখন সেখানে ২% হিসেবে গণনা করতে হবে এবং করদাতা রিটার্ন দাখিল করার পূর্বে যে উৎসে এবং অগ্রিম কর দিয়েছেন তা বাদ দিয়ে বাকি যে আয়কর থাকবে তার উপর ২% মাসিক ভিত্তিতে বিলম্ব ফি গণনা করতে হবে।
উপরে যে পরিবর্তনের কথা আলোচনা করেছি তা এই মাসে চূড়ান্ত হবে। এবং ঐ অনুযায়ী আগামী ০১ জুলাই থেকে ব্যক্তি করদাতা রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। উপরের পরিবর্তনগুলো যদি আপনার কাছে জটিল মনে হয় বা ঘরে বসেই যদি ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল সম্পর্কিত সেবা নিতে চান তাহলে BDTax এর সহায়তা নিতে পারেন।
জসীম উদ্দিন রাসেল
Leave A Comment